করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় যুক্তরাজ্যে দ্বিতীয় দফায় ফের শুরু হয়েছে লকডাউন। এ ক্রান্তিকালে দেশটিতে আগের তুলনায় বেড়ে গেছে সন্ত্রাসী ও উগ্রপন্থি কর্মকা-। ব্রিটিশ সরকার স্বীকৃত অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকসের (ওএনএস) তথ্যও দিচ্ছে একই বার্তা। ওএনএস বলছে, করোনাকালের লকডাউনে জনসাধারণের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় আগের বছরের তুলনায় খুনখারাপি ৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। এ নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ব্রিটেনের সন্ত্রাসবাদবিরোধী কেন্দ্রীয় সংস্থার মতে, লকডাউন শুধু মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরই প্রভাব ফেলছে না, দেশের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি সৃষ্টি করেছে। অনলাইনে ভুল ও বিকৃত তথ্য তুলে ধরার মাধ্যমে উগ্রবাদিতা ছড়ানোর চেষ্টা চলছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথ্য প্রদান করেছে। করোনা মহামারীর সংক্রমণ রোধে আরোপ করা লকডাউনের জন্য ব্রিটেনজুড়ে চরমপন্থা বাড়ছে উল্লেখ করে সন্ত্রাসবাদবিরোধী সংস্থার শীর্ষপর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, দ্বিতীয় লকডাউনের পর অনলাইনের মাধ্যমে দেশের অনেক তরুণ চরমপন্থিদের দ্বারা আকৃষ্ট হচ্ছে।
অন্যদিকে কাউন্টার টেরোরিজম পুলিশের সুপারিনটেনডেন্ট ম্যাথিউ ডেভিসন বলেন, লকডাউন এবং অনলাইনে চরমপন্থা ছড়ানোর মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। চরমপন্থিরা অনলাইনের মাধ্যমে ঘৃণা এবং ভুল তথ্য প্রচার করে উগ্রবাদিতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। ডেভিসন আরও বলেন, উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার আগেই এই চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কারণ উগ্রবাদীরা ব্রিটিশ কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণীদেরকেই টার্গেট করছে।
অন্যদিকে গত ১২ নভেম্বর দেশটির সর্বাধিক প্রবাসী বাংলাদেশির বসবাস যে ইস্ট লন্ডনে, সেখান থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগ। কাউন্টার টেরোজিমের কর্মকর্তা রিচার্ড স্মিথ জানান, গ্রেপ্তার দুজনের আচরণ ছিল সন্দেহজনক। তাদের স্যোশাল মিডিয়া থেকেও তথ্য নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দুজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও সন্দেহের তালিকায় আরও অনেকেই আছে। এসব সন্দেহভাজন বিভিন্নভাবে সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে। বিষয়টি যুক্তরাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে হুমকি তৈরি করছে।
এসব বিষয়ে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, লকডাউনের মাঝেও কিছু মানুষ দেশে বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করছে। তবে তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এদিকে সরকারের ‘জয়েন্ট টেরোরিজম অ্যানালাইসিস সেন্টার’ হুমকির স্তরে রয়েছে বলে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। দেশটিতে আইনশৃঙ্খলা কয়েকটি ধাপে ভাগ করা আছে। বর্তমানে দেশটির আইনশৃঙ্খলার যে অবস্থা তাতে সন্ত্রাসী হামলার পাঁচটি স্তরের মধ্যে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতার পর্যায়ে রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে লন্ডন ব্রিজ এবং ক্লাপহ্যাম কমনে ৭৩টি গাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ক্লাস ‘এ’ ড্রাগ বা মাদক এবং পাচার, অবৈধ অস্ত্র বহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্দেহে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া আটক করা হয়েছে ১৬ প্রকারের মাদক, নগদ অর্থ, গুলিভর্তি আগ্নেয়াস্ত্র, ১১ ইঞ্চি লম্বা ম্যাসিটি ছুরি।
Leave a Reply